বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং এই অবস্থাকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন চিকিৎকরা।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, যদিও পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই এই বিপদ সম্পর্কে অবহিত নন।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: ফজিলাতুন্নেছা মালিক উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলে বর্ণনা করছেন। তিনি বলছেন, আক্রান্ত হবার দিক থেকে শহরের জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই বেশি।

“হঠাৎ করে একদিন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তারা জানছেন যে উচ্চ রক্তচাপ ছিল,” বলছেন ডা: ফজিলাতুন্নেসা মালিক।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্ত চাপের কারণ সুনিদ্দিষ্টভাবে জানা যায়না, বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা । তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত বিষয় হিসেবেই দেখে থাকে।

পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের মতো জীবনধারায় অত্যধিক মানসিক চাপ এবং বর্তমান শহুরে জীবনধারা উচ্চ রক্তচাপের প্রবনতাকে বাড়িয়ে তোলে। সে কারনেই উচ্চ রক্ত চাপ এখন আর কোনো বয়সসীমার উপর নির্ভর করেনা, বলছেন আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: মোহাম্মদ বদিউজ্জমান।

ডা: বদিউজ্জমান বলছেন, “সাধারণত ৪০-উর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবনতা দেখা গেলেও এখন আমরা এর চেয়ে কমবয়সীদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপের প্রবনতা দেখছি।“

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সামাজিক জীবনে যে চাপ সেটি উচ্চরক্ত চাপের প্রবনতাকে বাড়িয়ে দেয়। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন বিশেষ করে ফাস্টফুডের প্রতি আসক্তি ও উচ্চ রক্ত চাপের জন্য দায়ী।

“এখনকার যারা শিশু কিশোর তারা ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছেনা এবং কোন শারীরিক পরিশ্রমও নেই। এরা যখন বড় হচ্ছে তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছে,“ বলেন ডা: বদিউজ্জমান।

ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাজির আহমেদ বলছেন, বাংলাদেশে হাইপারটেনশানে আক্রান্ত হবার সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেটি উদ্বেগজনক। নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উপর ব্যাপক চাপ ফেলবে বলে ডা: আহমেদ মনে করেন।

তিনি বলছেন, যাদের মা–বাবার উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করলে এবং শারীরিক পরিশ্রম না করলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন ডা: নাজির আহমেদ।

তিনি বলেন, সেজন্য এখন থেকেই জনগণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সেটি না হলে এর পরিণতি দেশের জন্য খারাপ হবে বলে সতর্ক করে দেন ডা: নাজর আহমেদ।

“উচ্চ রক্তচাপ তো একা থাকেনা। এর সাথে কিডনিও অকেজো হওয়া, হার্ট এ্যাটাক করা, স্ট্রোক, চোখের সমস্যাও তৈরী করে,“ বলেন ডা: নাজির আহমেদ। তিনি সতর্ক করে দেন সচেতনা গড়ে তুলতে না পারলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার সংখ্যা এখনকার চেয়ে দ্বিগুন হবে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। পরবর্তী পোষ্ট এর জন্য অপেক্ষা করুন।